কেন এই পাতা

পানুর ইচ্ছা, লেখক হইবেন । বাঙালি, লেখক না হইতে পারিলে নমো নমো করিয়া পাতের সংস্থান যদি বা হয় জাত রক্ষা হয় না - যথা আঁটকুড়া কুলীন । পানু বিস্তর পরিশ্রম করিলেন । দিস্তা দিস্তা রচনাবলী, অমনিবাস চিবাইলেন । প্রথমে কাব্য টানিয়াছিল, কারণ রস - রসে পাঁউরুটি ভিজিল না । পানু ঘটা করিয়া কিছুদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখিলেন (ভেঙ্গেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতিরম্যায়, আট হাজার বাষট্টি টাকার দরজা, খর্চা কে দ্যায় ! অথবা, কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, চৌমাথার মোড়ে দিব পেন্টুল খুলিয়া) হাউ হাউ করিয়া লোকে মারিতে আসিল । সমস্ত অবজ্ঞা করিয়া পানু লিখিয়া চলিলেন । যদ্যপি পানুর কলমের তোড়ে কাব্যলক্ষী কোঁ কোঁ, সম্পাদকের দপ্তরে চিঁড়া ভিজিল না । অতঃপর পানুর দুঃখে ব্যাবেজ সায়েব কম্পিউটার আবিষ্কার করিলেন । বাজারে ব্লগ আসিল । পানু ব্লগার হইলেন । এই পাতা পানুর পাতা । যা তা ।

Saturday, May 28, 2011

নতুনের কোন দুঃখ নেই ?

নতুনের কোন দুঃখ নেই ?

আদেখল্যের হইল ঘটি, খাবল খাবল চিঁড়া খাতি । ব্লগার হইয়াই লাফাইয়া চুড়ান্ত । কী করি, সরকার বাহাদুর ১৫ দিনের পেটারনিটি লীভ দিয়েছেন । কাজের মধ্যে বাচ্চা সামলানো । হাগু/হিসু পরিষ্কার, দুধ খাওয়ানো আর ঘুমের বারোটা । ফলে অফুরন্ত সময় ।

হাগুর কথায় মনে পড়লো – সইত্য সেলুকাস, লাঞ্চে চ্যবনপ্রাশ, বিচীত্র (টাইপো নয়) এ দ্যাশ । ভারতবর্ষের চেয়ে দেবতা, মনীষী, মহামানব পৃথিবীর কোথায় ? আমার বাথরুম পায়খানা আমাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে এইটুকু জানবার জন্য একজন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রয়োজন হয় । তেত্রিশ কোটি দেবতা কম পড়ে – “ইংরাজী” নামক এক দেবী রিসেন্টলি মাঠে নেমেছেন – ইন্টারভিউ উৎরে দেবার তাগিদে । দস্তুর মত মঠ মন্দির । বাঙালিরে দাবায়া রাখবে ক্যামনে ! ভারত এগোইতেছে, বাঙালি দৌড়াইবার তাগিদে ধুতি ছেড়ে বারমুডায় । উনিশ কুড়ি, মহিলা অগ্রগতি, পরকীয়া শিক্ষা, হাওয়াইয়ান লাউ চিংড়ি সঙ্গে পঞ্চান্ন হাজার বাবা, শেতলার থান, শনি মন্দির, কিচেন ড্রয়ারের দেবী (যিনি ড্রয়ারে চামচ আটকে বন্ধ হইবার থেকে গেরস্তরে ফুলস্টীম রক্ষা করিয়া থাকেন), স্টেশান সংলগ্ন বটতলায় বাপী তান্ত্রিক, মারণ, উচাটন, বশীকরণ, দূরকীয়া, পরকীয়া, স্বকীয়া, কেয়াকিয়া, দোর বানচোত কুছনেহিকিয়া-- সঅব । কাস্টমারের পোষাক বদলাইয়া যায় ।

এরি মধ্যে স্টেডি রবীন্দ্রজয়ন্তী । ১৫০ বছর পূর্তি, পরিবারবর্গ, আত্মীয় স্বজন চান করে লাল পাড় সাদা শাড়ি লিঙ্গভেদে গরদের পাঞ্জাবি -- টিভির সামনে । আবৃত্তি শিল্পীরা তেড়েফুঁড়ে লুটিয়ে লুটিয়ে (কন্ট্রাডিকশান ইজ দ্য ট্রুয়েস্ট
ডিকশান ফলোয়িং পোস্টমর্ডান ডিস্যাস্টার), নৃত্য – গীতি – “হে নূতন দেখা দিক আরবার”, “বাঁধ ভেঙ্গে দাও বাঁধ ভেঙ্গে দাও”...

পানুর ব্রেনের সাইজ অর্ধভূক্ত সুপারির ন্যায় – পানু বুঝিতে অক্ষম “হে নূতন দেখা দিক আরবার”-এর নূতনটি কী ? শুধু নূতন আকুতি ? বাঁধটি কোন বাঁধ ? নাকী রবীন্দ্রনাথ যেই নূতন কে দেখতে চেয়েছিলেন, যে অচলায়তন ভেঙ্গে উঠতে চেয়েছিলেন-সেই নূতন? অহো, আজো সেই নূতন দেখা পড়ে নাই অ্যান্ড রবীন্দ্রনাথ নিজেই এক অচলায়তনে পরিনত হয়েছেন।

বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ, অমিয় চক্রবর্তী, সমর সেন কয়েকটি নাম মাত্র ? কেদার ভাদুড়ি-কে কে চেনে ? নরেশ গুহ ? সজল বন্দোপাধ্যায়, শ্যামল সিংহ-- এঁরা কারা ? এরকম হাজার হাজার-- কেউ নূতন ছিলেন না (বানিজ্য এঁদের কারোর মধ্যে বিক্রয়প্রমিস পেলে অবশ্য আগামী ৭৫ বছরে এঁদের কেউ নূতন হয়ে উঠতেই পারেন-- যথা জীবনানন্দ)  । আজকের লোকেরা কেউই আজ প্রাসঙ্গিক নয় । প্রাসঙ্গিক বানিজ্য, প্রাসঙ্গিক নস্টালজিয়া, প্রাসঙ্গিক আজো শুধু “হে নূতন দেখা দিক আরবার”...

কোথাও পানুর ইচ্ছের মধ্যে বসে থাকেন একজন স্বদেশ সেন, তাঁর আনা দু’আনার মালা, পরিষ্কার ঠান্ডা ঘরের মেঝেয় রাখা শুশ্রূষা, স্নানের মধ্যে এক অতি সমতল শীত, ট্রাইসাইকেলের সোনার তারের মত শব্দ – নাহ তিনিও প্রাসঙ্গিক নন, আমরা কেউই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি না ।


নতুনের কোন দুঃখ নেই/ স্বদেশ সেন

নতুন কোথায় থাকে, নতুনের কোন দুঃখ নেই ?
মানুষ যেমন করে কুসুমপাতার ঠোঙ্গা বাঁধে
সেভাবেই বাঁধো তুমি মেঘ থেকে জল নামানো পাতা ?

তুমি সেই পাতা যার আকার ভরেছে চুয়াগন্ধ
সেই অপরূপা যার চুড়ি বাজে আর চোখ হাসে ?

কখনো বাসনা হয় – মেয়ে হলে ব্রোচ দেবো তাকে
কখনো সুবর্ণগুল দিয়ে খোঁজে মোমের আরক
রাঙ্গা ঠোঁট, মাজা দাঁত, নবনিযুক্ত ডুরে শাড়ি
সম্পূর্ণ পশমে রাখো পা

স্তরে স্তরে নির্জনতা তোমার চিবুকবিন্দু
হাতে ধরে থাকে
নাকি কোন প্রকৃত উন্মাদ
ঋতুভাঙ্গা কোয়া কুরে খায়
প্রিয় তারপলিন ছেঁড়ে
কামড়ে ধরে বীজের পাহাড়

তার দুঃখ অবেলায়, তার দুঃখ সমস্ত পল্লীতে ।

নতুন কোথায় থাকে, নতুনের কোন দুঃখ নেই ?

No comments:

Post a Comment