কেন এই পাতা

পানুর ইচ্ছা, লেখক হইবেন । বাঙালি, লেখক না হইতে পারিলে নমো নমো করিয়া পাতের সংস্থান যদি বা হয় জাত রক্ষা হয় না - যথা আঁটকুড়া কুলীন । পানু বিস্তর পরিশ্রম করিলেন । দিস্তা দিস্তা রচনাবলী, অমনিবাস চিবাইলেন । প্রথমে কাব্য টানিয়াছিল, কারণ রস - রসে পাঁউরুটি ভিজিল না । পানু ঘটা করিয়া কিছুদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখিলেন (ভেঙ্গেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতিরম্যায়, আট হাজার বাষট্টি টাকার দরজা, খর্চা কে দ্যায় ! অথবা, কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া, চৌমাথার মোড়ে দিব পেন্টুল খুলিয়া) হাউ হাউ করিয়া লোকে মারিতে আসিল । সমস্ত অবজ্ঞা করিয়া পানু লিখিয়া চলিলেন । যদ্যপি পানুর কলমের তোড়ে কাব্যলক্ষী কোঁ কোঁ, সম্পাদকের দপ্তরে চিঁড়া ভিজিল না । অতঃপর পানুর দুঃখে ব্যাবেজ সায়েব কম্পিউটার আবিষ্কার করিলেন । বাজারে ব্লগ আসিল । পানু ব্লগার হইলেন । এই পাতা পানুর পাতা । যা তা ।

Thursday, July 16, 2015

প্রিয় সম্পাদক



প্রিয় সম্পাদক,
দেখতে পাচ্ছি লঘু চাল ঘাসে, মাংসে লুকিয়ে রাখছে তার ভারী নুপুর, বিছে আর অলংকারজনিত সমস্ত খোঁড়ানো। তার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় মলমাসে। আমি জানি স্বর তাই যা সময়ের থেকে বেঁকে যায়, ঢুকে যায় অশুদ্ধতায়, লোহার পাইপে, বর্জ প্লাস্টিকে। আমি জানি ক্ষয় শুধু আলুথালু গতি নিয়ে  উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়াএও জানি তা বলে শেষ হয়ে যাবেনা কখনো কিছুফুরিয়ে যাওয়ার আগে যে কোন বস্তু, অবস্তু একটা ছাঁচ রেখে যায় পেরিফেরিতে, যার ভেতর বাতাস খেলা করে, শূন্যতা খেলা করে...মুখোসের মত পরে ফেলে আর ভয় দেখায়। ফলে স্বরের ক্ষয় বা ক্ষয়াটে স্বরের প্রতিক্রিয়া নিয়ে, রাজনৈতিক বিবেচনা নিয়ে মাথা আর ব্যথা করছে না।  অথচ মাথার ভেতর কেউ সারাদিন বাসন মাজে, শক্ত ব্রিসল দিয়ে কাপড় ঘষে, সারাদিন একটার পর একটা খালি টব গড়িয়ে দেয় সিঁড়িতে, রাত বিরেতে ফসফস করে জ্বলে ওঠে দেশলাই কাঠি, আর বলে ওঠে জলই দাহ্যআমি মিথ্যেই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করি আমার মাথাব্যথা এক পিওর ও শুদ্ধ মাথার বেদনা মাত্র যা আমাকে ঘিরে ধরছে চিন্তার থেকে বিচ্যুত হয়ে...তোমাদের কবিতাকারির থেকে বিচ্যুত হয়ে...

প্রিয় সম্পাদক,
বিষন্নতা এক জরুরি অবস্থা। বিষন্নতার দিনে নিখুঁত করে দাড়ি কাটা যায়। সমস্ত আয়নাই সেদিন উত্তল, জলও উত্তল। আমি জল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নজরুলগীতির ওপারে চলে যাই। যারা বলে বিষন্নতা এক জরুরি অবস্থাভালো লোক তারা। আমাকে পাটপাট টেবিলে বসায়, চীজ ওমলেট খেতে দেয়। মাখন আর মাশরুমের গন্ধ হেঁটে বেড়ায় রুমালে, বাথরুমে, ওডিকোলোনে। যারা বলে বিপন্নতা এক জরুরি অবস্থাভালো লোক তারা। গরম জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে যত্ন করে হাত পা মুছিয়ে দেয় আমার, ক্ষয়াটে জিন্স টি শার্ট খুলে পরিয়ে দেয় পরিপাটি শাদা রাতপোষাক। বেডসাইড টেবিলে বেল-ফুল রেখে আলো নিভিয়ে দেয়। ভালো লোকেরা এরপর দেয়াল থেকে একটা একটা করে আমার সমস্ত ছবি নামিয়ে ফেলে, বাথরুমের দেয়াল থেকে, টিস্যু পেপার থেকে ঘষে ঘষে আমার সমস্ত কবিতা মুছে ফেলে।
প্রিয় সম্পাদক,
এখন লিখছি। এর পর ছমাস ঘুমিয়ে থাকব সকেটে গোঁজা চার্জারের মধ্যে। তখন পক্ষপাত নিয়ে ভাবব। আলগোছে খবরের কাগজ তুলে নেব। প্রজেক্ট মিটিং থেকে ডেকে নেব আমার অভ্যাসকে। আমার মত ব্যাটারিচালিত মানুষের জানা উচিত মুখ তাই যে লুকিয়ে রাখে নিজেকে, দাঁতে চেপে ধরে বিমূর্ততা আর লাইটার হাতেই থেকে যায়। এখন লিখছি। ফলে ন্যারেটিভ-এর মধ্যে মুখ লুকিয়ে রাখছি। আমার মত মানুষ যারা ঋদ্ধি থেকে দূরে, গোপনীয়তাই তাদের ক্রাচআমার পায়ের কাছে কেবল দাঁড়িয়ে থাকে একপা এগোনোর বিস্ময়, একপা পেছোনোর স্বান্তনা। ধোঁয়া উড়ছে, স্পৃহা ও শংকা ভেদ করেধোঁয়া যা আগুন নেভার পরে প্রতীত হয়, কবিতা ফুরিয়ে যাওয়ার পরে। এখন লিখছি। ফলে তাপে ও আলোয় কেঁপে উঠছে ছায়াযে ছায়া প্লেটোবর্ণিত, যে ছায়া প্লেটোবহির্ভূক্ত...যে ছায়া আমার ডিওডোরেন্ট মেখে, আমার থালা থেকে আমার খাবারটুকু খায়, আমার সঙ্গেই উলঙ্গ হয়ে ঘোরে, ছুটি-ছাটায় পাসপোর্ট গুছিয়ে নায়াগ্রা বেড়াতে যায়, অজস্র বাংলাভাষী ছায়ার ভিড়ে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে বারবার...

প্রিয় সম্পাদক,
হ্যাঁ, সমস্ত কিছুই লেখা হয়ে গেছে। আমার কথা, আমার ছায়ার কথা, তার অভ্যাস, ধর্ম ও শীতের দুপুরে বাগানে দাঁড়িয়ে আলগোছে জল খাওয়ার কথা কেউ না কেউ লিখে রেখেছেকোথাও নিশ্চয় ভালো করে খুঁজলে অনন্য রায়ের, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ক্যাম্ব্রিয়ান যুগের পাশে ক্লাসে বিবর্তনবাদ পড়ানো আমার আকৃতি দেখতে পাবেন, আপনার নখ খোঁটার ভঙ্গি, মুঠির মধ্যে চোয়াল আটকে রাখার ভঙ্গিও দেখতে পাবেন। বদলানো বাজার অর্থনীতি, অধিকাংশ ইয়োরোপে ইউরো সংক্রান্ত বিপর্যয় হল, গ্রীসে স্পেনে জমির দাম বাড়ল, খোলা বাজারনীতির পরে ভারতের অভ্যন্তরীন বাজার ও উৎপাদন যে আজ সেন্সেক্সের সাথে উঠছে নামছে- এসমস্ত নিয়ে  মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজির বিবর্তন নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, অনাথবন্ধুতে যদি না পান, মহাভারতে নিশ্চয়ই পাবেন। এমনকী ২০১০-এ ভোর তিনটের সময় গল-পাথরের যন্ত্রণায় অজ্ঞান হয়ে যেতে যেতে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম রেডিওলজি-র ঘরে ঝনঝন করে জ্বলে উঠছে আলো, জেলের টিউব আর ইঞ্জেকশান হাতে আবছায়া উঠে দাঁড়াচ্ছেন নার্সসেও নিশ্চয়ই কোথাও লিপিত আছে, কিছু না হলে আ পিকচার ইজ ওয়ার্থ আ থাউজ্যান্ড (মানডেন) ওয়ার্ডস”—রবি বর্মা বা সারদা উকিলের ছবিতে  খুঁজলে কী আর পাবেন না?  আমাকে ভুল বুঝবেন না প্রিয় সম্পাদক, আমি আর কবিতা লিখছি না আমি শুধু হাতের লেখা অভ্যাস করছি। 
প্রিয় সম্পাদক,
ভালো আছি। বোধের আস্তরে সমতল পাপ ঢাকা থাকে। উচ নেই নীচ নেই, হেলা বা দোলায় নেই, এই তো সামান্য যেখানে যতটা ফুরিয়ে যাওয়ার পরেপ্রচ্ছন্ন চিবুক। শব্দের যুক্তি পার করে তবেই নিজের কাছে ফেরাচেনা পথে আগাপাশতলা এক হঠাৎহরিণ, অপর ব্যবহারে তাকে আর হিরণ করি না বরং ক্ষুরের দ্বিধায় গুল্মের আভাসটুকু সেটুকুই বেড়ে ওঠা বুঝিসেটুকুই মাঝরাতে যৌনাঙ্গ থেকে ভরা কলসের দিকে রেঙ্গতে রেঙ্গতে যায়ওই তার ধুলোর কামিজ আর ঝুলের গহনা। বরং তৃপ্তি হোকএই মত ভাবি--ওজনে আয়োজনে নিয়ন্ত্রণের পাশে মাত্র দুএক হাত তৃপ্তি। হাতফেরতায় ভাল আছি। পরিবেশের সাথে সহমত হয়ে, হত্যার শেষে গুঁড়ো সাবানের মত থেকে গিয়েচেনা মানুষের অস্বচ্ছতার মত ভালো আছি

প্রিয় সম্পাদক,
অমন করে কে আসে এক লাইন ভ্রমণে তো এক পংক্তি ঘরফেরা। মানুষ হাসে, আর দূরত্বের সূচনা তাকে আলগোছে ছোঁয়
চিবুকে কপালে। বিন্দু থেকে একচিলতে তার মনোনিবেশ নথেঝিকিয়ে ওঠে জল আর বিকার কাঁপিয়ে দিয়ে স্টীমার চলে যায়। উপলক্ষ্যের কাছে। এই আমাদের বিনত ছাউনি যাকে তুমি দুচোখে হারালে, কিছুটাক লাঞ্ছনাও দিলে অথচ দেখনি তুমি ধীর ও অনড় জলের ওপরে শুধু ভারী কালো মেঘ দীপ্যমান হয়। আমাদের আমতলা জামতলা সমস্ত ছোট হয়ে আসে, বেড়ে ওঠে দরজার খিল। দূরের জানলা দিয়ে দেখি কে যেন সম্পর্কের মত ধীরে চলে যাচ্ছে।
প্রিয় সম্পাদক,
শূন্যতা কখনো একা আসে না। তার ছায়াকেও সঙ্গে করে আনে। ভ্রষ্ট হয় বালিকণা, একাকীত্ব ভুলে, নিরালা-বিস্তার ভুলে দোঁয়াশের মত সম্পর্ক পাতায়। এই যেন পোয়াতি মানুষ আর তার অপরিসীম রোববারের সন্ধ্যাসন্ধ্যার আগ দিয়ে একা সাপের সাঁতারের রেখাযা শাখা থেকে সরে এসে, বিদ্যুল্লেখা থেকে সরে এসে, লাশের দিকে এগিয়ে আসা গুবরে পোকার থেকে পথ থেকে সরে এসে মাড় দেয়া শার্টের কলারে, নার্ভে ঢুকে যায়। সদ্য বৃষ্টি ছেড়েছে, ভেজা পাতার ওপর চাঁদের স্বান্তনা এসে বসেসারা পৃথিবীতে প্রতিশ্রুতির দিন শুরু হয় অথচ হাওয়ার কন্ট্যুরে শেষতক শূন্যতাই দোলে ডুবতে ডুবতে বুঝতে পারি, লাংসের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে সে, ব্যথাকে ভোঁতা করে তুলছে